সার্টিফিকেট ধারী লোক আছে, কিন্তু পরিশ্রমী, কমিটেড দক্ষ লোকের বড়ই অভাব।




*দেশে চাকরি নেই; কেউ নাকি চাকরি পায় না। কিন্তু বিডিজবস-এর মতো ওয়েবসাইটে হাজারে ৫/৬ টার বেশি complete profile পাওয়া যায় না।
* ফেসবুক-এ বেকারত্ব নিয়ে স্ট্যাটাস দেবে, কিন্তু *লিঙ্কদিইনে কারো প্রোফাইল রেডি না!*
*কোথায় খাইতে গেলাম, ঘুরতে গেলাম, আড্ডা দিলাম, কার বৌভাতে গেলাম সবই আপডেট আছে, *নিজের সিভিটা আপডেট হয় না!
* পাঁচটা মেয়েকে পটানোর জন্য ৫০ রকম ফন্দি আঁটে, কিন্তু পাঁচটা আলাদা প্রতিষ্ঠানে পাঁচ রকম চাকরির জন্য ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ একই!* কেন?
*বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ে, নেয় মার্কেটিং আর হিউম্যান রিসোর্স। কেন? ফাইন্যান্স নিবে না; কারণ অংকে দূর্বল! কে জানি তাকে বুঝাইছে- ফাইন্যান্স পড়তে সাইন্সের হায়ার ম্যাথ মাস্টার্স শেষ করে আসা লাগে।
*একাউন্টিং পড়বে না কারণ তার ব্যাকগ্রাউন্ড হয় আর্টস না হয় সাইন্স ছিলো! কে জানি তারে বুঝাইছে- এসএসসি বা এইচএসসিতে কমার্সের স্টুডেন্ট না হইলে একাউন্টিং-এ পড়া যায় না! আবার কারা জানি ছড়াইছে দেশে নাকি একাউন্টেন্টের কোনো দরকারই নাই; সব কম্পিউটারে করা যায়!
এদিকে মার্কেটিং-এ পড়ে *মার্কেটিং-এর কাজ করবে না;* হতে চায় ডাইরেক্ট মার্কেটিং ম্যানেজার, এসির বাতাসে বসে বসে কাজ করবে। মার্কেটিং-এর সংজ্ঞা জানতে চাইলে সুন্দর করে উত্তর দিবে, কিন্তু মার্কেটিং করতে গেলে কাস্টমার কি সংজ্ঞা ?
*এইচআর-এ পড়েও বলতে পারে না এইচআর-এর *মূল কাজগুলো* কী কী? খালি জানে- মানুষের চাকরি দেওয়া আর চাকরি খাওয়ার জন্য কাগজে সই করতে হয়!
*যে কাউকে প্রশ্ন করলে - কী চাকরি করতে চায়? হয় বলবে ব্যাংকে কাজ করব, না হয় বলবে মাল্টি‍ ন্যাশনাল ক্যারিয়ার গড়ব। কিন্তু ব্যাংকে কী কাজ করতে হয় বা মাল্টিন্যাশনাল-এ কী করা হয় প্রশ্ন করলে লা জবাব। ব্যাংকে বসে মানুষের টাকা গুনে সিল মারা আর মাল্টিন্যাশনাল মানে ম্যালা টাকা- এটুকুর বাইরে তেমন বেশীর ভাগের ধারণাই নাই!
চাকরি দিতে যাইবেন, *কোন যোগগ্যতার বলে চাকরি পেতে চাও* প্রশ্ন করলে উত্তর আসবে- গোল্ডেন ৩.৭৫, গোল্ডেন ৩.৫! কিন্তু এই রেজাল্ট কিভাবে আপনার প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগবে সে কথা প্রশ্ন করলেই ধরা! ইন্টাভিউ বোর্ড থেকে বের হয়ে এসে বলবে, আজকাল মামা-চাচা না থাকলে চাকরি হয় না, কপাল খারাপ!
*অনার্স পাশ করে বসে আছে, চাকরি পাচ্ছে না, চেষ্টাও করে না; *কোথায় গেলে স্কিল বাড়াবে*- সেই খবর নেই, হুট করে মাস্টার্স-এ ভর্তি হয়ে যাবে (অথচ একমাত্র শিক্ষকতা পেশা ছাড়া মাস্টার্স-এর প্রয়োজন নেই বললেই চলে)। তারপরও চাকরি না পেয়ে আরেকটা মাস্টার্স করবে, এলএলবি করবে, এমবিএ করবে এবারও চাকরি নাই! ২/৩টা মাস্টার্স-ওয়ালা লোক সমাজে যে কী পরিমাণ, তা একটা ব্যাংকের সিভি বাছাইয়ের কাজ করলেই টের পাবেন!
*এদিকে দেশে যোগ্য লোক পাওয়া কঠিন। জনৈক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক একজন শিল্পপতিকে বলেছিলেন, তাদেরকে চাকরি না দিয়ে আমাদের দেশের ছেলেদেরকে দিন। উত্তর পেয়েছিলেন, স্কিল-ওয়ালা একটা দেশি ছেলেকে দেখায় দেন, এক্ষুণি চাকরি দিচ্ছি। স্যারকে হতাশ হতে হয়েছে।
*শিক্ষার উদ্দেশ্য চোখের পর্দা সরিয়ে দেওয়া, মানুষকে অহংকার মুক্ত করা, কোনটা সঠিক কোনটা সঠিক নয় বুঝতে শেখানো; কিন্তু হয় উল্টোটা।
#এমবিএ করছে, এখন আর রিক্সার গ্যারেজের মালিক হতে পারবে না। #অনার্স শেষ করে ফেলছে, বাপ যে ছোট্ট খামার দিয়ে ৩/৪ ভাইবোনকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেছে, সেই খামারকে নিজের বুদ্ধিতে বাড়াতে চেষ্টা করবে না।
#দেশে একজন এমবিএ পাশ লোক চাকরিতে যোগ দেয় ১০-১২ হাজার টাকা বেতনে, আর একজন ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করে শহরে একটা আর গ্রামে একটা, মোট দুইটা সংসার চালায়!
#কিন্তু আমি যেহেতু এমবিএ করে ফেলছি, আমি কি আর ওই ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি হতে পারবো? কেউ বুঝে না- ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি না হই, অন্তত পাঁচজন মিস্ত্রির সরদার হতে পারলেও আয়-রোজগার মন্দ হয় না!
*এখন চলছে CEO-এর যুগ। ১,০০০ টাকায় একটা ডোমেইন, ৫০০ টাকায় হোস্টিং, ৩০০ টাকায় চার রঙের ভিজিটিং কার্ড, আর ঠেকায় কে? আমি এখন CEO! কোম্পানিতে লোক ক’জন? মাত্র তিনজন; তাইলে তুমি CEO হইলা ক্যামনে? উত্তর নাই!
#কাজের স্কিল নাই; কমিটমেন্ট ঠিক নাই; বিজনেসের প্ল্যান নাই; টাকার কথা তো বাদই দিলাম। দু’দিন পর সব শেষ! ওমনি শুরু হয়ে যাবে- আম্রিকায় সিলিকন ভ্যালি আছে, কিক স্টার্টার আছে, আমাদের কিচ্ছু নাই।
*আরে বাবা আকিজ সাহেব কোন ভ্যালিতে ছিলেন? স্কয়ার-এর স্যামসন এইচ. চৌধুরী কেমনে আগাইছেন?
খালি নাই নাই নাই নাই আর নাই! সত্য কথা বলতে, সমাজে সার্টিফিকেট ধারী লোক আছে কিন্তু পরিশ্রমী, কমিটেড দক্ষ লোকের বড় অভাব।


Related Posts