কোম্পানিতে মার্কেটিং জব সফলতা ও ব্যর্থতা
উন্নয়নশীল বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মের বিশাল বাজার বিদ্যমান। অসংখ্য কোম্পানি ব্যবসার উদ্যোগ নিয়ে কর্মের বিশাল বাজার সৃষ্টি করে রেখেছে। এই কোম্পানিগুলো কোনোটি প্রাইভেট লিমিটেড, কোনোটি পাবলিক লিমিটেড, কোনোটি আবার জয়েন্টস্টকের লাইসেন্সবিহীন ব্যক্তি মালিকানাধীন। মার্কেটিং সেক্টরে কাজ করা বড়ই চ্যালেঞ্জিং। এখানে মূল বিষয় হলো- আপনি মানুষকে কতটা ম্যানেজ করতে পারবেন। ম্যানেজমেন্ট পাওয়ারই এখানে মূখ্য।
বিভিন্ন মার্কেটিং কোম্পানিতে যারা সিভি জমা দেয় তারা কয়েক ক্যাটাগরিতে থাকে যেমন-
১.
একেবারেই নতুন লোক। কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সব কোম্পানি নতুন লোক সহজে নেয়না। নতুন লোক নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। এদের অনেকেই সিভি জমা দেওয়ার পদ্ধতিও জানে না। মোবাইলে ছবি তুলে পাঠায়, স্কীনশর্ট পাঠায়, ইমেজ আকারে পাঠায়। অথচ সিভি পাঠানোর সুন্দর নিয়ম হলো- পিডিএফ ফাইল আকারে ইমেইলে পাঠানো। এসকল লোকদেরকে কোম্পানি চাকরীতে নিলে ট্রেনিং এর দরকার হয়। এই কারণে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো লম্বা ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে থাকে। এই ট্রেনিং এর ব্যবস্থা সকল উদ্যোক্তারা করতে পারে না নানাবিধ কারণে। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো যারা ১০বছর মার্কেটে আছে তারা এটি করতে পারে। কিন্তু ১০বছরের নীচে কোনো প্রতিষ্ঠান এটি করতে পারে না অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
২.
কিছুটা অভিজ্ঞতা তৈরী হয়েছে এমন লোক সিভি জমা দিতে গিয়ে নানা ভুল করে থাকে। তারা বিজ্ঞাপন ভালো মত পড়ে দেখে না। কোথায় কি কারণে সিভি জমা দিচ্ছে জানেও না। সেখানে সিভি জমা দেওয়ার রাইটস তার আছে কি না? চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে তারা প্রভাবিত হয়। তারা স্থির নয়। ফিল্ডে বিক্রয় কর্মী নেবে কোম্পানি। সিভি দিয়েছে শোরুমে কাজ করা লোক। আগে বিজ্ঞপ্তি ভালো মত পড়তে হবে। কোন ক্ষেত্রে সিভি নিস্প্রয়োজন সেটিও জেনে নিতে হবে।
৩.
অভিজ্ঞ লোক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিভি জমা দেন কিছু কারণে। কোনো কারণে উপরের বসের সাথে মিলছে না, বেতন সুবিধা আশানুরূপ হচ্ছে না, গ্রুপিং এ পড়ে গেছে, মূল্যায়ন কম, বড় ধরনের ফল্টে চাকরীচ্যুত ইত্যাদি। তারাও সিভি জমা দিতে গিয়ে স্ত্রী-সন্তান-পরিবারের দিকে তাকিয়ে নীচে নামতে বাধ্য হন। বয়সের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান নিতে আগ্রহ দেখায় না। আবার তিনি যে প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করেছেন সেই প্রোডাক্টে ভালো ক্ষেত্রে খুঁজে পাচ্ছেন না। এই ধরনের ব্যক্তিদের উচিৎ একটু যাচাইবাছাই করে নেওয়া। সেই ক্ষেত্রে নিজ এরিয়াতে একটু মাথা গোজার ঠাঁই খোঁজা আগে। পরিবারকে সেভ রাখার জন্য এটি করতে হয়। তবে কোন প্রতিষ্ঠানে সিভি জমা দিচ্ছেন তা যাচাই বাছাই করে নেওয়া। সবাই দেখতে বাইরে আল্লাহর ফেরেশ্তার মতই। কিন্তু অনেকেই মানুষের মত নয়।
৪.
কিছু লোক আছে কারণে অকারনে কোম্পানি পরিবর্তন করে। স্বাধীনচেতা টাইপের। ভালো লাগলো না, দিলো গ্যাঞ্জাম লাগিয়ে। খুবই অভিজ্ঞ ও ধুরন্ধর টাইপের এরা। এরা ইচ্ছে করেই কোম্পানি পরিবর্তন করে। আর এই কারণে বর্তমান কোম্পানিগুলো এমপ্লয়দের থেকে তার মূল সার্টিফিকেটসহ নানাবিধ কাগজ জমা নেয়। যাতে সে কোথাও যেতে না পারে। ডু অর ডাই। কোনো কোম্পানি বারবার এমপ্লয় পরিবর্তন চায় না। এতে কোম্পানির ক্ষতি হয়।
আপনি একজন চাকরী প্রার্থী। সিভি জমা দেওয়ার আগে আপনাকে দেখতে হবে আপনি কোথায় সিভি দিচ্ছেন। আপনার সিভি তৈরী ও জমা দেওয়ার পদ্ধতি ঠিক আছে কি না? যদি লাইগা যায় এই ফর্মূলা বাদ দিতে হবে। এতে পস্তাতে হবে। অনেকেই বলেন- যোগ্যতা কি মায়ের কোল থেকে কেউ নিয়ে আসে কি না? তাদের বলি- কেউ মায়ের কোল থেকে নিয়ে আসে না। তবে যাদের কমনসেন্স জাগ্রত তারা সিভি জমা দিতে গিয়ে যে বিষয়গুলো ভাবনায় আনে তা হলো-
১.
একটি সুন্দর সিভি তৈরী করা। বিজ্ঞাপনের যখন অভিজ্ঞতা চায় তখন অভিজ্ঞতার ফিরিস্তি সিভির শুরতেই বড় করে লিখতে হয়। অনেকে সময় আপনার অভিজ্ঞতা কোথায় লিখেছেন তা খুঁজেই পাওয়া যায় না। এমনিতেই সব কোম্পানি যখন সিভি যাচাই করে তখন আগে দেখে অভিজ্ঞতাসহ সিভি কোনগুলো। ১০জন লোক নিয়োগ দিলে যদি ৫টি সিভি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হয় তাহলে সেগুলোকে তালিকায় আগে রেখে বাকিগুলো ডিলেট করে দেয়। সুতরাং অভিজ্ঞতা থাকলে তা শুরুতেই স্পষ্ট করে লিখতে হয়।
২.
কোন প্রতিষ্ঠানে সিভি দিচ্ছে সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা নেওয়া। আদৌ সে প্রতিষ্ঠানের কোনো ভিত্তি আছে কি না? যেখানে জামানত চায় সেখান হতে এড়িয়ে চলা। প্রতিষ্টান কি লিমিটেড কোম্পানি না কি নামেই আছে? ওয়েবসাইট, ফেসবুক, অন্যান্য যোযোগ মাধ্যম ঠিক আছে কি না? অফিস ঠিকানা গুগলে আসে কি না? নাকি বারবার ঠিকানা পাল্টায়?
৩.
যদি আপনি কোম্পানিকে ভালো মনে করেন তাহলে স্থায়ীভাবে কাজ করার নিয়তে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে কাজে নেমে পড়ুন। মনে রাখবেন আপনি যদি কারও ক্ষতি না করেন কেউ আপনার ক্ষতি করতে পারবে না।
৪.
যে কোম্পানিতে আপনি সিভি দিয়েছেন সেখানে যাওয়ার পূর্বে কোম্পানির পন্য সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিয়ে যাবেন। সেসকল পন্য অন্য কোন কোন কোম্পানিতে আছে তা জানতে হবে। কি কি চ্যালেঞ্জ আছে তাও জানতে হবে। পন্যটি মার্কেটে নতুন হলে কি কি প্রশ্নের সম্মুখিন হবে তার সঠিক জবাব জেনে যাবেন। মনে রাখবেন, বানিয়ে বানিয়ে অতিরিক্ত বলে সাময়িকের জন্য একজন কাষ্টমারকে প্রলুব্ধ করাতে পারলেও কোম্পানী যদি আপনাকে নিজ এলাকায় জব দেয় তাহলে আপনার জন্য স্থায়ী ক্ষত হবে সে চাকরী। সুতরাং বুঝে শুনে আগাতে হবে। আপনি হয়তো মনে করছেন, কোম্পানির ভালোর জন্য কিছু করছেন। কিন্তু উপরের বস সেটি জানে না, তাহলে সে কাজের কোনো মূল্য নেই। আপনাকে সব শেয়ার করতে হবে।
৫.
অর্থনৈতিক লেনদেন এ সতর্কতা জরুরী। যে সকল প্রতিষ্ঠান জামানত চায় তাদের থেকে দূরে থাকুন। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা যারা করে তাদের সম্পর্কে জানুন। কোম্পানির ব্যাকগ্রাউন্ড জানুন। ফিল্ডে গেলে টাকা লেনদেন এ সতর্ক হোন। কোম্পানির প্যাডে চুক্তি ছাড়া কোনো লেনদেন নয়। টাকার লেনদেন ব্যক্তিগত একাউন্টে নয়। কোম্পানির একাউন্টে করতে হবে। লেনদেনের সকল ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে।
সর্বপরি আমরা ম্যাটসন ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড কোম্পানি যা- জয়েন্টস্টক থেকে লাইসেন্স নেওয়া, শিল্পমন্ত্রনালয় থেকে ব্রান্ড ট্রেডমার্ক নেওয়া, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেডলাইসেন্স নেওয়া এবং পাবলিক ব্যাংকে কোম্পানির নামে একাউন্ট খোলার মাধ্যমে ব্যবসায় নেমেছি। আমরা এখন ডিলারের মাধ্যমে ডিস্ট্রিবিউট করছি ইলেক্ট্রিক এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য। আগামীতে নানাবিধ পণ্য ডিস্ট্রিবিউট করবো। আমরা নিচ্ছি দক্ষ জনবল। অসংখ্য বেকারের স্বপ্নে হাতছানি ম্যাটসন।
ম্যাটসন কোম্পানির পলিসি সবসময় লিখিত। ফিল্ডের কর্মীরা মার্কেট ধরার জন্য মুখে কোনো বিষয় বলে থাকলে তার দায় একসময় কোম্পানি নেয় না। আমাদের ৫পৃষ্টার এগ্রিমেন্ট পেপারে বিস্তরিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সে মোতাবিক কেউ বিজনেস করলে লাভবান হবেই।
আমরা একজন এমপ্লয়ের নিয়োগবিধি ও অফিস আদেশ স্পষ্ট লিখিত দেই। সে মোতাবিক কেউ কাজ করলে সফলতা নিশ্চিত। আমরা বিশ্বাস করি আপনি একজন বিশ্বস্ত কর্মী আমাদের। আপনার পেছনে লোক লাগিয়ে রাখা বা সকাল বিকেল ৩বেলা রিপোর্ট চাওয়া আমাদের কাজ নয়। আপনি কাজের লোক হলে দিন শেষে সেল বের করবেন এটাই শেষ কথা। সেল বের করতে পারেননি মানে আপনি কিছুই করেননি। আপনি মার্কেটে গিয়েছেন কি যাননি সেটি সেল এর উপরই নির্ভর করে। বলতে পারেন যে, আমাকে তো সময় দেবেন। আপনার কথা ঠিক। কিন্তু, আপনি নিয়োগ লেটার নেওয়ার আগে সকল কিছু জেনেই নিতে হবে এটাও মনে রাখা দরকার।
ধন্যবাদ। আমাদের সাথেই থাকুন।